৬টি উদ্ভাবনী সামাজিক উদ্যোগ যা বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে


বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম কয়েকজন উদ্ভাবনী চিন্তাবিদরা তাদের মাহাত্ম্য ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এমন কিছু কাজ করেছেন এবং করে চলেছেন যা গণমানুষের জীবন মানের সাথে সাথে স্থানীয় সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে।
সামাজিক উদ্যোগ আসলে কী? খুব সাধারণ বিবেচনায় কোনো বড় সামাজিক, স্বাস্থ্যগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নতিতে কাজ করার কোনো মহৎ উদ্যোগই সামাজিক উদ্যোগ। ব্যবসা বা অন্য যেকোনো উপায়ে হোক সামাজিক উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত হয় গণমানুষের কল্যাণে। সামাজিক উদ্যোক্তারা সৃজনশীল উদ্ভাবনী পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের পরিবর্তন ও পরিবেশ উন্নত করতে কাজ করেন।
photo: islington.impact hub
বিশ্বব্যাপী গৃহীত এমন কিছু সৃজনশীল মহতী উদ্যোগ নিয়ে এই নিবন্ধে আলোচনা করবো। আমার বিশ্বাস এই উদ্যোগগুলো বিস্তারিত জানার পর আপনার ভেতরেও সমাজের জন্য ভাল কিছু করার উৎসাহ সৃষ্টি হবে। চলুন জেনে নিই উদ্যোগগুলো সম্বন্ধে।

১. গ্রাউন্ডসওয়েল

গ্রাউন্ডসওয়েল এমন একটি উদ্যোগ যা ভোক্তাদের মহৎ উদ্যোগে নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহারে উৎসাহিত করে। তারা ক্রমবর্ধমান নিত্যদিনের নানা খরচ, এমনকি মানুষের কর্মশক্তি খরচ এবং বিলাসবহুল জিনিসপত্রের পেছনে পতনশীল খরচের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে তোলে। গ্রাউন্ডসওয়েল এমন ভোক্তাদের “সিভিক ভোক্তা” নামকরণ করেছে। তারা ভোক্তাদের অর্থ দায়িত্বশীল কাজে ব্যয়, অর্থ সঞ্চয় ও স্থানীয় সম্পদের ব্যবহারে উৎসাহিত করে।
তারা সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় করে একসাথে কাজ করছে যেন কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রের সঞ্চয় ও মিতব্যয়িতার মধ্য দিয়ে স্থানীয় নবায়নযোগ্য জালানি শক্তি সুলভ করা যায় এবং বেশি সংখ্যক পরিবারকে এসব সুবিধার আওতায় আনা যায়। এভাবে পরিবেশের কল্যাণে কাজ করা আসলে নিজের কল্যাণেই কাজ করা। সুতরাং এখানে জয় নিজেরই।

২. কমপ্রিনিউরশিপ

কমপ্রিনিউরশিপ শিক্ষার্থী ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে একত্রিত করছে উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক প্রকল্প পরিচালনা ও বিকশিত করার জন্য। এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির একটি সাম্প্রতিক প্রকল্পে ডিজাইন, সাংবাদিকতা ও বাণিজ্য বিষয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের একটি আসল প্রিন্ট পত্রিকা তৈরি ও বিতরণের জন্য স্থানীয় গৃহহীন মানুষের সাথে কাজ করতে দেওয়া হয়।
photo: social innovation competition
বাস্তবায়ন করার পর এই প্রকল্প ব্যাপকভাবে সফল হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফুটপাতের বিক্রেতারা এই পত্রিকা সরবরাহ করে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো আয় করেন। মূলত, এসব কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের প্রকল্পগুলো উৎপাদনমুখী, গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবজীবনের উপযোগী করে তুলছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এলাকার মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

৩. আর্সেনিক শোষক

অধ্যাপক ও ফুলব্রাইট-নেহরু পণ্ডিত অরুপ সেনগুপ্ত বিশ্বব্যাপী পরিষ্কার ও নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিতকরণে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনি আর্সেনিক বিষক্রিয়া কমিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত নানা উপায় অনুসন্ধান করছেন। আপনি যদি আর্সেনিক সমস্যাকে এখন আর তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচনা নাও করেন, তবুও মনে রাখতে হবে, ১৪০ মিলিয়ন মানুষ এই আর্সেনিকে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অধ্যাপক ও ফুলব্রাইট-নেহরু পণ্ডিত অরুপ সেনগুপ্ত photo: lehigh
অধ্যাপক সেনগুপ্ত এক্ষেত্রে অনেকটা সফল। বিশাল জনগোষ্ঠীর ভারত থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত মোট ৮টি দেশে ব্যাপকভাবে আর্সেনিক বিষক্রিয়ার হার কমে এসেছে অধ্যাপক সেনগুপ্তের উদ্ভাবিত পুনঃব্যবহারযোগ্য আর্সেনিক শোষক ব্যবহারের ফলে।

৪. বায়োলাইট

বায়োলাইট একটি স্টার্টআপ যা তাপবিদ্যুৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাঠ-পোড়া স্টোভ পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখার কাজ করে। বিস্ময়করভাবে, তাদের ছোট স্টোভগুলি সেল ফোন এবং এলইডি লাইট চার্জ করতে পারে।
photo: biolite energy
বায়োলাইট স্টোভ জ্বালিয়ে কার্যকর শক্তি তৈরিতে জনসন অ্যান্ড জনসন, হিউলেট প্যাকার্ড এবং নাইকির মতো বড় প্রতিষ্ঠিত ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করছে। তাদের উদ্ভাবিত এই স্টোভ নিচ্ছিদ্র ও নিরাপদ। এই সুলভ স্টোভ শুধুমাত্র দ্রুত বর্ধনশীল উন্নত এলাকায় নয়, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে সমান হারে সরবরাহ করা হবে।

৫. TCK লার্নিং সেন্টার

TCK লার্নিং সেন্টার হংকংয়ের স্বল্প আয়ের অভিবাসী কর্মীদের জন্য কম খরচে শিক্ষা প্রদান করে। কেন্দ্রটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী গৃহকর্মীদের জন্য ইংরেজি, প্রযুক্তি এবং পড়ার অ্যভাস তৈরির কোর্স প্রদান করে এবং অন্যান্য অভিবাসী কর্মীদের নানান শিক্ষার মাধ্যমে তাদের কর্মজীবনের সুযোগ সুবিধা আরও উন্নত করতে কাজ করে।
photo: aiya
আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য তারা সঙ্গীত, হিসাবরক্ষণ এবং ভিডিও এডিটিংয়ের মত বিভিন্ন ধরণের কর্মশালার ব্যবস্থা করে।

৬. ভয়েডস্টার্চার

ভয়েডস্টার্চার এমন একটি উদ্যোগ যা আয়ারল্যাণ্ডের ডাবলিনে অবস্থিত শূন্য বাড়িগুলো স্বল্প মেয়াদী শিক্ষণকেন্দ্র ও উদ্যোক্তা গবেষণাগারে রূপান্তরিত করে। বাড়িগুলো শূন্য পড়ে থেকে সময় ও সম্পদ অপচয় হওয়ার বদলে তারা নিখরচায় ইউনিটগুলোতে গৃহহীনদের আশ্রয় দিয়ে থাকে, নতুন উদ্যোক্তাদের স্টার্টআপ শুরু করার জন্য জায়গা দিয়ে থাকে আর বেকার লোকদের নতুন কাজের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
ভয়েডস্টার্চার মূলত অপচয় হওয়া সম্পদ ও জায়গার সদ্ব্যবহার করে উৎপাদনমুখী করে তোলে আর সুবিধা বঞ্চিতদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
আপনার মাথায় কী আছে পৃথিবী পাল্টে দেওয়ার মত এমন কোনো মহতী উদ্যোগের পরিকল্পনা? যদি থাকে তবে আজই নেমে পড়ুন। কেননা বাইরের পৃথিবী আপনার দিকে চেয়ে আছে। তাছাড়া মানুষ একসময় মারা যায়, কিন্তু টিকে থাকে কেবল গণমানুষের কল্যাণে করা এমন কোন মহৎ কাজ। সুতরাং এবার আপনার পালা।

To more explore : Life is Mysterious Science



Post a Comment

0 Comments